
ইউজিসির বাজেট বরাদ্দে বৈষম্যের অভিযোগ শিক্ষকদের ক্ষোভ
- আপলোড সময় : ০৬-০৩-২০২৪ ১১:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-০৩-২০২৪ ০৪:৫১:৩৮ অপরাহ্ন


দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট বরাদ্দসহ সার্বিক তদারকি করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। মঞ্জুরী কমিশন কতৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ও প্রয়োজন অনুসারে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ইউজিসির এ বাজেট বরাদ্দের ওপর বৈষম্যের অভিযোগ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী বেশি হওয়া স্বত্তেও কম বরাদ্দ পাচ্ছে। ইউজিসি কতৃক প্রকাশিত সর্বশেষ ৪৯তম প্রতিবেদনে দেখা যায়, সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী ক্রমানুসারে ঢাবি, চবি, রাবি, জবি, জাবি, শাবিপ্রবি এবং খুবি। অর্থ্যাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী সংখ্যা অনুয়ায়ী জবির স্থান চতুর্থ। এছাড়া শিক্ষকদের সংখ্যা ৬৭১ অনুসারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ষষ্ঠ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে অধিক সংখ্যক শিক্ষক আছে ঢাবি, চবি, রাবি, জাবি ও বুয়েটে। এবং জবির থেকে কম সংখ্যক শিক্ষক আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু মোট বাজেট ও খাত ভিত্তিতে বরাদ্দ হিসাব করলে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই পিছনের সারিতে অবস্থান করছে। বাজেট বরাদ্দ অনুসারে জবির অবস্থান দশম। যা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তুলয়ায় খুবই কম। ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য নুন্যতম সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নানাবিধ সংকটের মধ্যে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
ইউজিসির সর্বশেষ ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বরাদ্দ বিবরণীতে দেখা যায়, মোট বাজেটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হয়েছে ২৬৬ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। জগন্নাথকে ১৩৬ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা। অথচ জগন্নাথের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭ হাজার ৫২৭ জন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫ হাজার ৬১০ জন। একই ভাবে জবির তুলনায় কম শিক্ষার্থী রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাত্র ৮ হাজার ১১৫ জন শিক্ষার্থী ও ৫৬৬ জন শিক্ষকে বাজেট বরাদ্দে এগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এই তুলনায় জবির ৯ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১০০ জন শিক্ষক বেশি থাকা সত্ত্বেও জগন্নাথকে মোট বাজেটে ১৩ কোটি টাকা কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এমনকি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ৬ হাজার ৬৭৪ শিক্ষার্থী ও ৫২৩ শিক্ষকের জন্য মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১১২ কোটি টাকা। এদিকে মোট বাজেটের অন্তর্ভুক্ত পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তা খাতেও বরাদ্দ কম। জবিতে এই চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও পূর্ণ আবাসিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে এই খাতে ৫৩ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা আর জবিকে দেয়া হয়েছে ২৯ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গবেষণা খাতে শিক্ষক অনুপাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে জগন্নাথের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট প্রায় অর্ধেকেরও কম।শাবিপ্রবি পেয়েছে ৬ কোটি টাকা আর জবি পেয়েছে মাত্র ২ কোটি ৫০ লাখ । এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণ ও যন্ত্রপাতি খাতে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ কোটি ৬ লাখ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ৪ কোটি ৪৩ লাখ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩ কোটি ৩৭ লাখ, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ৩ কোটি ১৫ লাখ, পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩ কোটি ৫ লাখ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ২কোটি ৬৭লাখ টাকা। অথচ উক্ত খাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট মাত্র দেয়া হয়েছে মাত্র ১কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, আমরা বরাবরই বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত ও অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাজেট একেবারেই কম। প্রতিবছর বাজেট কিছুটা বাড়ে কিন্তু সেটা সবার ক্ষেত্রেই। অতিতের শতকরা হিসেবে আমরা আশা রাখবো আগামী বাজেটে জবির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমলে নিবে। বিশ্ববিদ্যালয়েন অর্থ পরিচালক অধ্যাপক ড. মহসিন রেজা বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্যতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত জরুরি। শিক্ষক শিক্ষার্থীর তুলনায় আমরা অনেক বেশি। অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস নির্ভর কার্যক্রম। জ্বালানি খরচও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান অনুযায়ী ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, বরাদ্দের সিংহভাগই শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থ সংকট।
উপাচার্য অধ্যাপক ড.সাদেকা হালিম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। পরিধি ও মান বেড়েছে। আবাসন সুবিধা নেই হল গুলো বেদখল। এই অবস্থায় বাজেটের সংকট দূর করতে হবে। সার্বিকভাবে শিক্ষার মান বাড়াতে বাজেট বাড়াতে হবে। ইউজিসির অর্থ পরিচালক রেজাউল করিম হাওলাদার বলেন,শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত হিসাব করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিট বাজেট ও খরচের উপযোগিতা, তাদের পাঠানো তথ্যের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ